Wednesday, February 20, 2013

Eye Exercise



আদিম পৃথিবীতে মানুষ জন্মেছিলো শিকারির চোখ নিয়ে যাতে দূরে থাকা শিকার কে সে সহজেই দেখতে পারে। আধুনিক যুগে অতিরিক্ত কম্পিউটার ব্যবহার কারী এবং ভিডিও গেম প্লেয়ার দের চোখের ফোকাস দিনের বেশিরভাগ সময় ই অত্যন্ত নিকটবর্তী স্থানে থাকে। পাশাপাশি এদের চোখের পাতা ফেলার হার ও অনেক কম। এই দুটো কারণে এদের মাঝে দেখা যায় নানারকম সমস্যা যেমন স্বল্পদৈর্ঘদৃষ্টি (nearsightedness), চোখের শুস্কতা(dryness) ও ঝাপসা দৃষ্টি (blurred vision), পাশাপাশি ঘাড় ও মাথা ব্যথা তো আছেই। এইসব সমস্যা থেকে রেজাই পেতে কাজের ফাকে ফাকে প্রতি আধাঘন্টায় নিচের ৫ মিনিটের এক্সারসাইজ গুলো করুন, সম্ভব না হলে অন্তত প্রতি একঘন্টায় হলেও করুন।

১) ২০ বার চোখের পাতা দ্রুত ফেলুন। এবার চোখ বন্ধ করে চোখের মনি ঘড়ির কাটার দিকে ১৫ বার আবার বিপরীতে ১৫ বার ঘুরান। এরপর লম্বা দম নিন। দম ছাড়তে ছাড়তে আস্তে আস্তে চোখ মেলুন।(এক মিনিট)

২) আপনার বুড়ো আঙ্গুল নাক থেকে ৬ ইঞ্চি দূরে ধরে তাকিয়ে থাকুন (একটা বড় শ্বাস নিয়ে আস্তে আস্তে ছাড়া পর্যন্ত)।. এবার অন্তত দশ ফিট দূরের কোন বস্তুর দিকে তাকিয়ে থাকুন থাকুন (একটা বড় শ্বাস নিয়ে আস্তে আস্তে ছাড়া পর্যন্ত)।. ঘরে জানালা থাকুলে সবচেয়ে ভালো হয়ে বাইরে গাছের দিকে তাকিয়ে থাকা। না থাকলে ঘরে থাকা কোন দূরবর্তী বস্তুর দিকে তাকান। এভাবে একবার বুড়ো আঙ্গুল আরেকবার দূরের বস্তুর দিকে তাকান মোট ১৫ বার। এটি আপনার চোখের ফোকাস ঠিক করতে সহায়তে করবে। (এক মিনিট)

৩) ঘরের এক কোনায় বসে ঘরের সব ছোটখাট বস্তু গুলোর (দরজা, লাইট, ফার্নিচার, ঘড়ি) দিকে হালকাভাবে একটার পর একটাতে দৃষ্টি বুলাতে থাকুন। এটি চোখের ফ্লেক্সিবিলিটি বাড়াতে সহায়তা করে (এক মিনিট)

৪) দুই হাতের তালু একটির সঙ্গে আরেকটি ঘসে গরম করুন। এবার তালু দিয়ে চোখ ঢেকে বসে মনে মনে ৬০ পর্যন্ত গুনুন। আলতো করে চোখ ঢেকে রাখবেন, কোন প্রকার চাপ প্রয়োগ করবেন না। হাতের তালুর নিচের অংশ গালে থাকবে এবং আঙ্গুল গুলো কপালে থাকবে। এক হাতের আঙ্গুল আরেক হাতের আঙ্গুলের উপর ক্রস করে থাকবে। এটি চোখকে রিল্যাক্সড করতে সহায়তা করবে (১ মিনিট)

৫) আপনার থেকে ১০ ফিট দূরে একটি বিশাল চার (৪) কল্পনা করুন। ৪ টিকে কাত করে শুণ্যে শুইয়ে দিন। এইবার চোখ দিয়ে ৪টির গা বেয়ে বেয়ে দৃষ্টি বুলান। কিছুক্ষন ৪ এর মাথা থেকে নিচের দিকে দৃষ্টি বুলান এরপর নিচ থেকে মাথা বরাবর দৃষ্টি বুলান (এক মিনিট)

Friday, February 15, 2013

untitled


আমি যখন মূর্তির বিপক্ষে নোট লিখি, কেমিক্যাল ইন্জিনিয়ারিং পড়েও তখন আমি " অশিক্ষিত ছাগল" আর ওরা মূর্তির পক্ষে মানব বন্ধন করলে,ইন্টারমিডিয়েটে পড়লেও তখন "শিক্ষিত বানর"।

আমি যখন আলেম ওলামাদের প্রতি অপবাদের বিরুদ্ধে লিখি, আমি তখন "ব্রেইন ওয়াশড" আর ওরা শিক্ষাবিদ নামধারী নাস্তিকদের অপকর্মের পক্ষে কমেন্ট করে হয় যায় "প্রগতিশীল"।

আমি বোরখা পড়া মেয়েদের প্রতি সরকারের অত্যাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে শরিক হয়ে "গেঁয়ো, সেকেলে" উপাধি পাই। আর ওরা পতিতাদের অধিকার নিয়ে আন্দোলন করে "মুক্তমনা" উপাধি পায়।

আমি যখন ওদের গালিগালাজের জবাবে যুক্তিপূর্ণ ভাষা ব্যাবহার করি, তখন আমি "হাবা গোবা" আর ওরা যখন আমার যুক্তিপূর্ণ লেখায়, গালিগালাজ যুক্ত কমেন্ট করে আমাকে ব্লক করে দেয়, তখন ওরা
"পাংখা বুদ্ধিমান"।

এভাবেই চলছে....... একটা দেশ,আমার প্রানের বাংলাদেশ .........
দেশটা আমার রক্তে কেনা দেশটা আমার মায়ের দেনা
দেশটা আমার দুখী বোনের হাসি
বাংলাদেশকে আমি ভালোবাসি .................. অনেক ভালোবাসি ............

collected- তরুন-প্রজন্ম-Torun-Projonmo

তাহরির স্কয়ার যা ভেঙেছে শাহবাগ স্কয়ার তা-ই জোড়া লাগানোর চেষ্টা করছে

তাহরির স্কয়ার থেকে শাহবাগ স্কয়ার। এই দুই স্কয়ারের মিলগুলো হলো, ফেসবুক, ব্লগ, টুইটার প্রভৃতি এই উভয় স্কয়ার সৃষ্টি করেছে। নেতৃত্বে এসেছে অপরিচিত তরুণ ব্লগাররা। দাবি আদায়ের উদ্দেশ্যে দিবারাত্রি অবস্থান একটা ভিন্ন আমেজ যোগ করেছে।

তবে বড় অমিলটি হলো, তাহরির স্কয়ারের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রশক্তি ছিল খড়্গহস্ত। আর শাহবাগ স্কয়ারে রাষ্ট্রশক্তি মূল পৃষ্ঠপোষকতায় নিয়োজিত। এখানে পুলিশের মরিচের গুঁড়ার স্প্রে নেই। ভীতিকর ঘোড় সওয়ারীরা নেই। বন্দুকের গুলি বা বোমার আঘাতে ঝাঝরা হওয়ার ভয়টি নেই। বরং তৃষ্ণা নিবারণের জন্য আছে সুশীতল মিনারেল ওয়াটার। আছে খাবারের আরামদায়ক সরবরাহ। আছে মৌসুম ও প্রকৃতির দান নাতিশীতোষ্ণ পরিবেশ। আছে মিডিয়ার পুষ্প অর্পণ। আছে সুশীল সমাজের আশীর্বাদ। আছে সিনেমা, নাটক ও গান শোনার সু-বন্দোবস্ত।
আছে টিভিতে চেহারা দেখানোর ও বক্তব্য রাখার অপূর্ব সুযোগ। গতকাল যে লাকিকে কেউ চিনত না, সেই লাকির লাক বা ভাগ্য আজ খুলে গেছে। মতিয়া চৌধুরী ছিলেন এনালগ অগ্নিকন্যা। তার জন্য অনেক সাধনার দরকার হয়েছিল। এই লাকিদের ডিজিটাল ‘অগ্নিকন্যা’ বানানো হয়েছে চোখের নিমিষে। বোধগম্য কারণেই ছাত্রলীগ ছাত্র ইউনিয়নের এই অগ্নিকন্যার মাথা ফাটিয়ে হাসপাতালে পাঠিয়েছে।

উত্সাহী মিডিয়া ও উত্ফুল্ল সুশীল সমাজ এটাকে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গেও তুলনা করে বসেছেন। ২০১৩ সালে নতুন প্রজন্ম নাকি এর মাধ্যমে ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের স্বাদটি আস্বাদন করছে! অনেকটা পিকনিকের আমেজ দিয়ে কঠিন সেই মুক্তিযুদ্ধকে তুলে ধরার প্রচেষ্টা মহান মুক্তিযুদ্ধকে হেয় করার শামিল।

তবে একটা গ্রুপ কোলকাতার হোটেলে বা শরণার্থী শিবিরে অনেকটা এ ধরনের পিকনিকের আমেজ আস্বাদন করেছেন। মেজর জলিল তার বইয়ে সুন্দরভাবে সেই বিষয়টি তুলে ধরেছেন। এই অপরাধে একজন সেক্টর কমান্ডার হয়েও তিনি বীর উত্তম খেতাব না পেয়ে রাজাকার-উত্তম খেতাব পেয়েছেন।

জহির রায়হান এ সংক্রান্ত কিছু ডকুমেন্টস সংগ্রহ করেছিলেন। একটি প্রামাণ্য চিত্রের মাধ্যমে তা তুলে ধরার ঘোষণা দিয়েছিলেন। ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি নিখোঁজ হওয়ায় তিনি আর সেই সুযোগটি পাননি। স্বাধীনতার প্রায় ৪৪ দিন পরে তিনি নিখোঁজ হয়েছিলেন। ৫৬ হাজার বর্গমাইলের মধ্যে এক বর্গমাইল অঞ্চলও তখন পাক সেনা বা তার দোসরদের অধীনে ছিল না। তার এই নিখোঁজ হওয়াটি এখনও রহস্য হয়েই আছে।

পিকনিক আমেজের বাইরে অন্য একটি বিশাল দল ছিল উত্তপ্ত যুদ্ধের ময়দানে। সেটা ছিল তাহরির স্কয়ারের চেয়েও হাজার লক্ষ গুণ উত্তপ্ত। তদানীন্তন মেজর জিয়া, মেজর জলিল, বাঘা সিদ্দিকী সবাই ছিলেন এই তপ্ত মাঠে। ঘটনাক্রমে এরা সবাই একের পর এক রাজাকার খেতাবে ভূষিত হয়েছেন। সবচেয়ে বড় আক্রমণ করা হয়েছে স্বাধীনতার ঘোষক, জেড ফোর্সের অধিনায়ক ও অন্যতম সেক্টর কমান্ডার শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াকে। যুদ্ধের সময় তাকে লেখা জনৈক পাকিস্তানি সামরিক কর্মকর্তার চিঠিও আবিষ্কার করে ফেলা হয়েছে। পাকিস্তানি ওই সেনা কর্মকর্তা ওই চিঠিতে জিয়ার কর্মকাণ্ডে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

স্বাধীনতা যুদ্ধের এমন একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে যদি পাক বাহিনী হাত করে ফেলতে পারত তবে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে এই নির্মম পরাজয়টি কখনই বরণ করতে হতো না। স্বাধীনতা যুদ্ধে মাত্র নয় মাসে আমাদের এই বিজয়, কমান্ড লেভেলে ইস্পাত কঠিন ঐক্য ও শৃঙ্খলাটি তুলে ধরে। কাজেই এই প্রচেষ্টাটি শুধু ঐতিহাসিক সত্যের বিরুদ্ধেই যাচ্ছে না—এটা কমন সেন্সের সঙ্গেও সাংঘর্ষিক।

ভয়ঙ্কর দিকটি হলো, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রোথিত করার নামে একটা গ্রুপের মাঝে এই ধরনের মাইন্ড সেট তৈরি করা হয়েছে। এই মাইন্ড সেটটি বিপরীত ধারার কোনো কথা শুনতে চায় না। কল্পনার জগতটিও এদের বড়ই রহস্যময়। দেলোয়ার জাহান ঝন্টুদের সিনেমার কাহিনীর মতো এরা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বানায়। এদের বাঘা বাঘা গবেষকদের বিশ্লেষণী ক্ষমতা দেখলে সত্যি করুণা হয়। তাদের লেখা ইতিহাস পড়ে আমরা ভয়ে যে প্রশ্ন করি না সেসব প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর ভাইয়ের নাত্নী শর্মিলা বসু। সেসব প্রশ্ন অনেক বিব্রতকর। পাকিস্তানের টাকা খেয়ে এসব লেখেছেন বলে আমরা সেসব প্রশ্ন ধামাচাপা দিয়ে রেখেছি।

শাহবাগ স্কয়ারে একটা তাহরির স্কয়ার হয়েছে জেনে অতি খুশি হয়েছিলাম। তারুণ্যের ধর্মই হলো ভয় ও শঙ্কাহীন থাকা। তারুণ্যের ধর্মই হলো সব অত্যাচার, উত্পীড়ন, অনাচার, কুপমণ্ডুকতা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে দাঁড়ানো। কিন্তু হতাশ হয়েছি এই তারুণ্যের সেই খণ্ডিত দৃষ্টিভঙ্গি দেখে। চল্লিশ বছরের আগের মানবতাবিরোধী অপরাধ এই তারুণ্যকে স্পর্শ করেছে এটা অবশ্যই আনন্দের। তবে বর্তমানের দিকে শাহবাগের এই তারুণ্য বড্ড বেশি উদাসীন।

এ দেশের কোনো সরকারের আমলনামাটিই পরিষ্কার নয়। তারপরেও বর্তমান সরকারের আমলনামা অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। বাজিকর, টেন্ডারবাজ, দখলবাজ, চাপাতি লীগ মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। আর এরা পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছে সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে।

শেয়ারবাজারের ৩৩ লাখ বিনিয়োগকারীর হাহাকার এই তারুণ্যের কানে পৌঁছায়নি। হলমার্ক এই দেশটির ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে তছনছ করে ছেড়েছে, সেই ক্রোধ শাহবাগ স্কয়ারের এই তারুণ্যকে স্পর্শ করেনি। পদ্মা সেতুতে আবুল নামক ইঁদুরেরা পুরো জাতির ভাগ্যের শিকাটি ছিঁড়ে ফেলেছে, সেই হতাশা এই তারুণ্যকে ছুঁতে পারেনি। কুইক রেন্টাল এ জাতির গলায় যে ফাঁস লাগিয়েছে, সেই কষ্ট এই তারুণ্যকে নাড়া দিতে পারেনি। সাগর-রুনীর ট্র্যাজেডি এই তারুণ্যের দ্রোহে একটুও দোলা লাগাতে পারেনি। গুম ও খুনের কারণে শত শত নারী ও শিশুর কান্না বাতাসে ভাসছে, তারুণ্যের কানে সেই আহাজারিগুলো পৌঁছতে পারেনি।

কাজেই প্রশ্ন, এরা কি সেই তারুণ্য নাকি তারুণ্যের বেশে সেই জরা বার্ধক্য? যারা ভিন্ন মতাবলম্বীর উদ্দেশ্যে বলে, ‘বিচার টিচার আবার কী, এদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দিলেই হয়।’ বার্ধক্যপীড়িত মন্ত্রীদের উচ্চারণের সঙ্গে এই তারুণ্যের উচ্চারণ দাড়ি-কমাসহ মিলে গেছে। সেই জরা-বার্ধক্যের প্রভাব কাটিয়ে এই তারুণ্য মূল যুদ্ধাপরাধী ইয়াহিয়া, ভুট্টো, নিয়াজী, টিক্কা খান ও রাও ফরমান আলীদের নামগুলো উচ্চারণ করতে পারছে না। পারছে না পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ১৯৫ জন চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীর বিষয়টি সামনে আনতে। টক-দইওয়ালা গল্পের মতো হানিফ ও সাজেদা চৌধুরীকে সামান্য বিব্রত করা ছাড়া এই তারুণ্য সরকারকে বিব্রত করার জন্য একটা কাজও করছে না। বরং এসব ঢেকে ফেলার জন্য যুদ্ধাপরাধের বিচারের আবেগটি ব্যবহার করছে।

‘তোমার সঙ্গে আমি ভিন্নমত পোষণ করতে পারি। কিন্তু তোমার এই মত প্রকাশের জন্য জীবন দিতে রাজি আছি।’ এই কথাটি কোনো জরা-বার্ধক্য উচ্চারণ করতে পারে না। এই কথাটি উচ্চারণ করতে পারে একমাত্র তারুণ্য। কিন্তু শাহবাগ স্কয়ার থেকে আমরা এ কী শুনছি? সেখান থেকে ভিন্ন মতাবলম্বী পত্রিকা ও টিভি বন্ধ করার হুমকি দেয়া হয়েছে। হুমকি দেয়া হয়েছে বিরোধী দলের ব্যবসা ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলো দখলের। এই বুড়োরা এতদিন যা বলে এসেছে শাহবাগ স্কয়ারের এই তারুণ্য দেখা যাচ্ছে হুবহু সেই একই কথা বলছে।
মানুষের রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও বাক স্বাধীনতা হরণ করেছিল হোসনি মোবারকের বাকশাল। সেই বাকশাল ভাঙার জন্যই সৃষ্টি হয়েছিল তাহরির স্কয়ার। প্রকারান্তরে সেই বাকশালকে নতুনভাবে জোড়া লাগানোর নিমিত্তেই সৃষ্টি হয়েছে এই শাহবাগ স্কয়ার। প্রজন্ম চত্বর।
১৯৭৫ সালের বাকশাল যে ভুল করেছিল বর্তমানের বাকশাল সেই ভুলটি করতে চাচ্ছে না। ১৯৭৫ সালের বাকশাল জাতিকে গেলানোর চেষ্টা হয়েছিল কোনো রকম তরল ছাড়াই। ধারণা ছিল নেতা হুমকি দিলেই জাতি তা গিলবে। জাতি তা উগলে দিয়েছে। কাজেই এবার এমনভাবে গেলানো হবে জাতি যাতে টের না পায় যে তারা বাকশাল গিলে ফেলেছে। এর জন্য সহযোগী হয়েছে বুঝে বা না বুঝে শাহবাগ স্কয়ারের এই তারুণ্য।

এজন্য যুদ্ধাপরাধী মামলার স্পর্শকাতরতা দিয়ে প্রথমেই জাতির মুখটি বন্ধ করে ফেলার চেষ্টা চলছে। সব মানব প্রজ্ঞাকে বিদায় দিয়ে আবেগের বুলডোজার আমদানি করা হয়েছে। এর ফলে বর্তমান সময়ের প্রধান দাবি তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুটি সম্পূর্ণ চাপা পড়ে গেছে। পদ্মা সেতু বা সাঁকোর উপর দিয়ে পার হওয়ার চিন্তা বাদ দিয়ে জনগণ ব্যস্ত হয়ে পড়েছে কাদের মোল্লাকে জীবন সাঁকোর অপর পারে পাঠানোর উদ্দেশে। দরবেশ বাবাজি, হলমার্ক ও আবুলদের সঙ্গে পাঠানোর শ্লোগান থাকলে না হয় একটা কথা ছিল।

অভিযোগ উঠেছে, গলাকাটা পাসপোর্টের মতো একজনের নাম অন্য জনের শরীরের সঙ্গে লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। এই অভিযোগগুলো বিশ্বাসযোগ্যভাবে প্রমাণ করতে পারেনি প্রসিকিউশন। হামান দিস্তা বা বুলডোজার দিয়ে অনেক কিছুই গুঁড়িয়ে দেয়া যায়, কিন্তু মানুষের বিশ্বাসকে টলানো যায় না। আওয়ামী লীগের এমপি রনি প্রসিকিউশনের দুর্বল দিকগুলো নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এগুলো নিয়ে উচ্চতর আদালতে আরও বিব্রত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন এই তরুণ সংসদ সদস্য। মনে হচ্ছে, প্রসিকিউশনের দুর্বলতাকে সরকার ‘শাহবাগ স্কয়ার’ দিয়ে পূরণ করতে চাচ্ছে।

শাহবাগ স্কয়ার সবচেয়ে মুশকিলে ফেলেছে সম্ভবত বিএনপিকে। সরকারের এই রাজনৈতিক কৌশল বা তীরটির মূল টার্গেট বিএনপি। তবে যে শক্তি দিয়ে বিএনপিকে আঘাত করতে চাচ্ছে সেই শক্তি দিয়েই সরকারকে কাবু করা সম্ভব। কাজেই চুপ না থেকে বিএনপির নৈতিক অবস্থানটি পরিষ্কার করতে হবে। এ কারণে আঠারো দল কিংবা জনগণ কারও সামনেই বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হবে না। কারণ বিএনপির নৈতিক অবস্থানের পক্ষেই আছে আন্তর্জাতিক মহল ও মানব প্রজ্ঞার অবস্থান।

১৯৭৩ সালের কোলাবেরটর বা দালাল আইনে যে ২৮০০০ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, আজকের অভিযুক্তদের একজনও সেই তালিকায় ছিলেন না বলে জানিয়েছেন তখনকার চিফ প্রসিকিউটর খন্দকার মাহবুব হোসেন। তার এই দাবিকে কেউ চ্যালেঞ্জ করেনি। ডিজিটাল এই যুগে বিশ্ববাসীকে অন্ধকারে রাখার সুযোগ নেই। সরকার যাকে বহির্বিশ্বের চাপ বলছে তা মূলত আন্তর্জাতিক মহলের যথাযথ উদ্বেগ।

মাইকেল ক্রস নামক এক ব্রিটিশ নিউজ এডিটর লিখেছেন, Beyond the obvious point that any miscarriage of justice involving the death penalty should be a matter of concern , the Dhaka tribunal raises two issues. One is the abuse of the term ‘ international’ which should be reserved for war crimes proceedings under genuinely international jurisdiction. The other is the potential for political over-spill. Jamaat-e-Islami is a political force in some parts of UK , and while I have little sympathy with its members I would not like them to be handed a victim card to play.

অর্থাত্—স্পষ্টতই ন্যায়বিচারের কোনো রূপ স্খলন হেতু যদি কোনো মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় তবে তা আন্তর্জাতিক মহলের জন্য দারুণ উদ্বেগের কারণ হবে। ঢাকার ট্রাইব্যুনালটি দুটি প্রশ্নের উদ্রেক করে। প্রথমটি হলো আন্তর্জাতিক শব্দটির অপব্যবহার। কারণ এই পরিভাষাটি শুধু আন্তর্জাতিক জুরিসডিকশনের তদারকিতে অনুষ্ঠিত অপরাধ ট্রাইব্যুনালের জন্যই সংরক্ষিত থাকা উচিত। অন্যটি হলো সম্ভাব্য রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া। জামায়াতে ইসলামী যুক্তরাজ্যের কোনো কোনো অংশে একটি রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। এদের সদস্যদের প্রতি আমার খুব সামান্যই সহানুভূতি রয়েছে। কিন্তু এরা কারও হাতে অবিচারের শিকার হোক তা আমি চাই না।

মাইকেল ক্রস তার সেই নিবন্ধে নুরেমবার্গ বিচারের প্রধান প্রসিকিউটর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিচারপতি রবার্ট জ্যাকসনের একটি উদ্ধৃতি টেনেছেন। দায়িত্ব গ্রহণের আগে আগে রবার্ট জ্যাকসন বলেছিলেন, It would be better to shoot Nazi leaders out of hand than pervert the process of law by setting up a sham court. তিনি আরও বলেছেন, You must put no man on trial under the forms of judicial proceedings if you are not willing to see him freed if not proven guilty.

অর্থাত্—‘প্রহসনের আদালতে বিচারের পুরো প্রক্রিয়াটিকে বিকৃত বা কলঙ্কিত করার চেয়ে অভিযুক্তদের কোনো বিচার ছাড়া গুলি করে মেরে ফেলাই উত্তম।’ আর ‘যদি অপরাধ প্রমাণিত না হলে অভিযুক্তকে ছেড়ে দেয়ার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুুত না থাক, তবে কাউকে বিচারের আওতায় এনো না।’

সরকার প্রযোজিত ও সুশীল লীগ পরিচালিত শাহবাগ স্কয়ারের এই নাটক দেখে মনে হচ্ছে, রবার্ট জ্যাকসনের এই পরামর্শটি মানলে সরকার অনেক ভালো করত। কাজেই আন্তর্জাতিক শব্দটির অপব্যবহার করলে আন্তর্জাতিক মহল চুপ করে থাকবে না। তখন শাহবাগ স্কয়ার থেকে নেয়া এই ‘মনোবল’ খুব বেশি কাজে দেবে না।

কাজেই বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের উচিত হবে সুশীল লীগের প্রচারণায় বিভ্রান্ত না হয়ে নিজস্ব এজেন্ডা নিয়ে জোর কদমে অগ্রসর হওয়া। শাহবাগ স্কয়ারের নামে শাহবাগ নাটকের অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্যগুলো জনগণের বোধগম্য ভাষায় বুঝিয়ে বলতে হবে। এদেশের তথাকথিত সুশীল সমাজ প্রায় পুরোটাই আওয়ামী কব্জায়। কাজেই সারা দেশের দেশপ্রেমিক নাগরিক সমাজকে দ্রুত কার্যকর করতে হবে। চেতনাপন্থী সুশীল লীগের মতলবি প্রচারণা থেকে সব কর্মী ও নেতাদের মুক্ত রাখতে হবে। যে চেতনাপন্থীরা স্বাধীনতার ঘোষকের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে তাদের কাছ থেকে দেশপ্রেমিক শক্তি কখনই প্রশংসা পাবে না। ওদের প্রশংসায় যেমন পুলকিত হওয়া ঠিক হবে না, তেমনি ওদের গালিতে মন খারাপ করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।

দেশের অভ্যন্তরে এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে যে দেশপ্রেমিক শক্তি রয়েছে তাদের ভোকাল বা সরব হতে হবে। সবার মুখটি খুলতে হবে। ইন্টারনেটে নিজের মতটি বলিষ্ঠভাবে তুলে ধরতে হবে। শিক্ষক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, কৃষিবিদ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী ও প্রশাসকসহ সমাজের সর্বস্তরের নাগরিক সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। আবেগ নয়, যুক্তির ভাষায় নিজেদের অবস্থানটি তুলে ধরতে হবে।
এই দেশটি আওয়ামী লীগের নয়। এই দেশটি বিএনপির নয়। এই দেশটি জামায়াতের নয়। এই দেশটি আমাদের সবার।

আমাদের অবস্থান আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নয়। আমাদের অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে নয়। আমাদের অবস্থান জামায়াতের বিরুদ্ধে নয়। আমাদের অবস্থান বাকশালের বিরুদ্ধে। আমাদের অবস্থান এক দলীয় শাসনের বিরুদ্ধে। আমাদের অবস্থান স্বৈরতান্ত্রিক সব নিপীড়নের বিরুদ্ধে।

মুক্ত চিন্তা, গণতন্ত্র ও ন্যায়ের পক্ষে যারা থাকে তাদের জয় অনিবার্য। খুশির কথা, ওরা তাহরির স্কয়ারকে এ দেশের মানুষের অনুভবে এনে দিয়েছে। কাজেই নকল তাহরির স্কয়ার ভেঙে আসল তাহরির স্কয়ারের আবির্ভাব সময়ের অনিবার্য দাবি। সাইনবোর্ড দেখে নয়। জনগণ চেনে নেবে কণ্ঠের আওয়াজ শুনে।


লেখাটি লিখেছেনঃ  মিনার রশীদ
minarrashid@yahoo.com
আমার দেশ

শাহবাগ সমাধানের দিকে নয় সমস্যার দিকেই এগুচ্ছে


প্রথমেই বলে রাখি, আমি ভালো লিখিয়ে নই। নীরবে পড়ে যাওয়াই আমার কাজ। এদ্দিন সেটাই করেছি, এমনকি নিজের প্রোফাইলেও আমি মোটেই স্ট্যাটাস দেইনা বললেই চলে। কিন্তু দেশের বর্তমান পরিস্থিতি আমাকে লিখতে বাধ্য করেছে তাই আমার দৃষ্টিকোণ থেকে কিছু কথা লিখলাম।


ব্যপারটা এমনই হয়ে আসছে, আমরা বাঙ্গালীরা একটা বৃত্তের মধ্যে আটকে আছি। আমাদের রাগ, ক্ষোভ, ঘৃণা, ভালোবাসা, পছন্দ, অপছন্দ, এমনকি আদর্শিক ও ধর্মীয় বিশ্বাস পর্যন্ত, সবকিছুই কোন প্রভাবক ছাড়া তুঙ্গে উঠে না। তাই আমাদের জেগে ওঠা বা ঘুমিয়ে থাকা, সবই আমরা করে থাকি অন্যের স্বার্থ বাস্তবায়নের জন্য। আমাদের নিজেদের কোন চিন্তার স্বাধীনতা নেই, সবচেয়ে ভয়ংকর কথা হলো আমরা আমাদের নিজস্ব মগজ, জ্ঞান, ও বুদ্ধি দিয়ে চিন্তা করার মতো বুদ্ধিমান হতে পারিনি। আমরা আবহমান কাল ধরে অথর্বই রয়ে গেলাম। আমরা যদি একেবারে সোজা সাপ্টা চিন্তা করি তাহলে কি দাঁড়ায়? একজন সাদা মনের মানুষ ভালো কে ভালবাসবেন এবং মন্দকে ঘৃণা করবেন। উদারতা বা মহানুভবতা, যা আমরা আমাদের পাঠ্য পুস্তকে পড়েছি, সেগুলোর প্রায়োগিক দিক গুলো কোথায়? উদারতা ও মহানুভবতা কি এই নয় যে একজন সুন্দর মনের মানুষের মধ্যে শুধু পাপকে ঘৃণা করার জন্যেই ঘৃণা থাকবে, এবং ভুলকারিকে তার পরবর্তীতে ক্রমানুসারে ভালো কাজ করে যাওয়ার দরুন অতীতের জন্যে ক্ষমা করে দিয়ে বুকে টেনে নেয়ার জন্য মহানুভবতা থাকবে। একজন সাদামনের মানুষ ঘৃণার অনল উদগীরনের চাইতে ভালোবাসা ও ক্ষমার দৃষ্টান্ত দেখাতে সচেষ্ট হবেন। সৎ মানুষ মাত্রেই একজন মানুষ মিথ্যার বেসাতিতে বসবাস না করে মিথ্যাকে বয়কট করবেন যদিওবা সেটা নিজের গোত্রের স্বার্থ বিরুদ্ধ হয়। সাদা-কালো দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এর চেয়ে সহজ কথা আর হতে পারে না, বরং এটাই সার্বজনীন। কিন্তু বই পুস্তকের এই মহান মহান শিক্ষাগুলোর ব্যক্তিগত জীবনে প্রয়োগ কই? সামাজিক প্রয়োগ কই? এবং এগুলোর জাতীয় জীবনের প্রয়োগ কই?


এখন যে দেশে চরম অস্বস্তিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে, এমন এক কিম্ভুতকিমাকার পরিস্থিতিতে আমাদের ন্যায়ের পক্ষপাতিত্ব কোথায়? আমাদের নিজস্ব মগজ, জ্ঞান, ও বুদ্ধি প্রসূত চিন্তা চেতনা কোথায়? কোথায় আমাদের ভালো কে ভালোবাসা? কোথায় আমাদের মন্দকে ঘৃণা করা? কোথায় আমাদের প্রতিপক্ষকে বুকে টেনে নেয়ার মতো মহানুভবতা? কোথায় মিথ্যাকে সর্বময় বয়কটের সাহসিকতা? আমাদের ব্যক্তিগত, সামাজিক ও জাতীয় জীবনের কোথাও কি এসব বিন্দুমাত্রও খুঁজে পাওয়া যাবে? তাহলে আমরা জাতি হিসেবে কি নিয়ে গর্ব করবো? কি আছে আমাদের? কেন আমাদেরকে সত্যের পক্ষে আপোষহীন জাতি হিসেবে গণনা করা হবে?


এই সময়ে দেশের সবচেয়ে বড় যে ইস্যুটি সকলকে একপ্রকার মহা উন্মাদে পরিণত করেছে সেটি হল যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁশির দাবী। কি পক্ষ আর কি বিপক্ষ, কাউকেই সঠিক ভাবে আচরণ করতে দেখা যাচ্ছে না। বলা হচ্ছে আমরা নাকি জেগে উঠেছি, দেশে না কি গন জোয়ার এসেছে। কিন্তু জেগে থাকা মানুষতো নুন্যতম কিছু চিন্তা-ফিকির করে, যৌক্তিক দিক গুলোকে জেগে থাকা মানুষের পক্ষে কিছুতেই এড়িয়ে গোয়ারের মতো সামনে ছুটে চলা সম্ভব নয়। যুদ্ধাপরাধ যদি হয়েই থাকে তাহলে এর বিচার অবশ্যই বাংলার মাটিতে হতে হবে কিন্তু বিবেকবানদের জন্য খটকাটা তো গোড়াতেই রেখে দিয়েছেন সরকার। যুদ্ধাপরাধ তারা মুখে মুখে বললেও কাগজে কলমে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বলে চালাচ্ছেন। এই খটকাটাকে আরও ঘনীভূত করা হচ্ছে জায়গায় জায়গায় মানবতা বিরোধী অপরাধ বলে প্রচার করে। প্রশ্ন হলো কেন এই ধোঁয়াশা? হুজুগে বাঙ্গালীর অধিকাংশই হুজুগে দৌড়লেও মগজ দিয়ে চিন্তাকরার লোক যে একেবারে নেই তা তো নয়।


নির্ভরযোগ্য ও আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত আইনি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইনটির ব্যপারে ডজন খানেক অসংগতির ব্যপারে আপত্তি আসলেও সরকার কোন তোয়াক্কা করলো না, এমনকি মাওলানা আবুল কালাম আজাদের রায়ে মৃত্যুদণ্ডও দেয়া হয়ে গেলো এই আইনে। এর পর যখন কাদের মোল্লার রায় এলো, জামাতের আন্দোলনে বিচারক গন প্রভাবিত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠলো এবং অন্যদিকে জামায়াত সে রায়কে প্রত্যাখ্যান করলো। মুখোমুখি দুই পক্ষই আদালতের বিপক্ষে স্থান নেয়ায় সরকার সেই আইন পরিবর্তন করতে উঠে পড়ে লাগলো। এই যখন অবস্থা তখন যাদের মাথায় বিন্দু মাত্র চিন্তা শক্তি সম্পন্ন মগজ আছে অর্থাৎ যারা আবেগ দিয়ে নয় বরং মগজ দিয়ে চিন্তা করেন তাদের কাছে একটা ব্যপার স্পষ্ট হয়ে উঠলো যে ট্রাইব্যুনাল, বিচারক এবং সরকার নিশ্চয় একটি নির্দিষ্ট এজেন্ডা বাস্তবায়নে একই পথে হাঁটছে। দেশের টেলিভিশন গুলোতে অনেক বরেণ্য আলোচক, আন্তর্জাতিক আইন বেত্তারা, নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান এ বিবাদী পক্ষ থেকে যখন একের পর এক আইন পুনর্ঘটনের দাবী আসলো তখন সরকার, মিডিয়া ও বাম নেতৃবৃন্দ তা কানে তুললেন না। কিন্তু যখনই একটি রায় নিজেদের স্বার্থ বিরুদ্ধ হয়ে গেলো তখনই স্বল্প নোটিসে সেই আইনটিই পরিবর্তনের জন্য ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠলো সরকার। নির্বোধ, জ্ঞান পাপী ও হীন স্বার্থান্বেষী ছাড়া বিবেকবান সকলেরই এ ব্যপারে প্রশ্ন জাগবে।


স্কাইপি কেলেঙ্কারির কথা না বললেই নয়, যখন দেখা গেলো স্কাইপি কেলেঙ্কারিতে ফাঁস হওয়া নথিপত্রের সাথে আদালতের বিভিন্ন সময়ে নেয়া পদক্ষেপ হুবহু মিলে গেছে তখন এখানে সন্দেহ জাগাটা খুবই যৌক্তিক যে ট্রাইব্যুনাল অসৎ শক্তির এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করছে। কিন্তু শুধুমাত্র ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যানকে সরিয়েই এই দায় থেকে মুক্তি পাওয়ার প্রচেষ্টা সাধারণ মানুষের কাছে অযৌক্তিক মনে হওয়াটাই স্বাভাবিক, বরং এটা হওয়া উচিৎ।


এদিকে প্রতিটি মামলার সাক্ষীসাবুদ ও শুনানি গুলো যারা নিবিড় ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন তারা ট্রাইব্যুনালের পক্ষপাতিত্ব সম্পর্কে প্রশ্ন তোলার হাজারটা অজুহাত পেয়ে যাবেন। পাশাপাশি রয়েছে বিবাদী পক্ষের সাক্ষীকে অপহরণ, ঘটনার কোন প্রত্যক্ষ সাক্ষী না থাকা, শোনা কথার উপর রায় দেয়া এভাবে রন্দ্রে রন্ধ্রে অসংগতি থাকা সত্বেও কিভাবে মানুষ এই রায়কে স্বাভাবিক ভাবে মেনে নেয়? এরকম মানুষ গুলো জাতিগত ভাবে কোন পর্যায়ে পড়ে? মানসিক ভাবে এরা কতটা সুস্থ? বুদ্ধিগত দিক দিয়ে এরা কতটুকু পরিপক্ব? এই প্রশ্ন গুলো কি আপনার মনে একটুকুও আঘাত করে না? যদি না করে তাহলে কোন প্রকারের মানুষ আপনি?


যারা ন্যায় বিচার চান তারা কখনই শাস্তি কি হতে হবে তা আগে নির্ধারণ করেন না, তারা চান আগে অপরাধীর অপরাধ প্রমাণ হোক, তারা এও চান যে অপরাধ প্রমাণের প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও যৌক্তিক হোক। অপরাধ প্রমানিত হওয়ার আগে অভিযুক্তকে অপরাধী বলাটাও কোন সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন মানুষের কাজ নয়। আজকে যারা শাহবাগে ফাঁশির দাবী নিয়ে দন্ত-নখর হীন বিতর্কিত ট্রাইব্যুনালকে প্রভাবিত করছেন এরা নিঃসন্দেহে ন্যায় বিচার চান না। যারা ন্যায় বিচার কামনা করেন তারা কখনই এমন আচরণ করেন না। তারা কখনই শাস্তি কি হবে তা নিয়ে আগে-ভাগে চিন্তিত হন না বরং তারা সুষ্ঠ ও স্বচ্ছ পদ্ধতিতে অপরাধ প্রমাণের পরেই সঠিক শাস্তিটি দেয়া হল কিনা তা নিয়ে চিন্তা করেন।


শাহবাগে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে জড়ো হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত উত্থাপিত দাবী গুলোর দিকে তাকিয়ে কি বিবেকবান মানুষদের মনে একবারও প্রশ্ন জাগে নি যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবির পেছনে আর কোন মোটিভ কাজ করছে কি না? যাদের ডাকে শাহবাগের আন্দোলনে মানুষগুলো গেলো এদের পরিচয় জেনেও কি কারও মনে প্রশ্ন জাগে নি যে এরা আসলে কি চায়? এই আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা আসিফ মহিউদ্দীন একজন স্বঘোষিত নাস্তিক, যিনি ইসলাম ধর্ম, নবী মুহাম্মদ (স) ও আল্লাহকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন ব্লগের পাতায় পাতায়। অমি রহমান পিয়াল, যিনি বাংলায় পরিচালিত সবচেয়ে বড় পর্ণ সাইট যৌবনযাত্রার একজন পরিচালক, আসিফ মহিউদ্দীনেরই আরেক সহচর তামান্না ঝুমু, ইব্রাহীম খলিল যিনি সবাক নামে ব্লগ লিখেন তিনিও ইসলাম, আল্লাহ, কুরআন ও নবী রাসুল নিয়ে অসংখ্য কুরুচিপূর্ণ ব্লগ লিখেছেন, এছাড়া আছেন আরিফুর রহমান, টেলিসামাদ (ব্লগ নিক), বাকরুদ্ধ (ব্লগ নিক) নামের নাস্তিক ও চরম ভাবে ইসলাম বিদ্বেষী ব্লগার একটিভিষ্টদের নেতৃত্বে চলছে শাহবাগ। মধ্যবয়সী বিপ্লব নামের এক ভদ্রলোক “শয়তান” নিকে ইসলাম নিয়ে লিখেছেন অনেক আপত্তিকর পোষ্ট, এছাড়া “মেঝছেলে”, ব্ল্যাক ম্যাজিশিয়ান, ছন্নছাড়া, জেবতিক নামের সুপরিচিত ব্লগার ও সাংবাদিকরা বছরের পর বছর ইসলামের বিরুদ্ধে চরম আপত্তিকর লেখালেখি করে এসেছেন। আজ তাদেরই ডাকে আমরা শাহবাগে উষ্মাদের মতো ছুটে চলেছি।


এতো এতো অসংগতি শাহবাগ ও তথাকথিত যুদ্ধাপরাধীর বিচারের সাথে লেপটে আছে যে একটি নোট লিখে তা সমাপ্ত করা সম্ভব নয়। কিন্তু যারা আবেগ দিয়ে নয় মগজ দিয়ে চিন্তা করেন অর্থাৎ যাদের মাথায় নুন্যতম পরিমাণে ঘিলু আছে তাদের বিবেকের কাছে প্রশ্ন থেকে গেলো এতকিছুর পরেও কি একবার আপনি ভেবে দেখবেন না যে চল্লিশ বছর ধরে ঘৃণার বীচ ছড়িয়ে মূলত আমাদের কি লাভ হয়েছে এবং কি লাভ ভবিষ্যতে হবে? এর চেয়ে কি পারস্পরিক সহমর্মিতা ও সহনশীলতাই উপযুক্ত সমাধান নয়? আমাদের বুদ্ধিজীবীরা বিধর্মীদের, তসলিমা নাসরিন ও হুমায়ুন আজাদদেরকে বাঁচাতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সবক দেন, ধর্মনিরপেক্ষতার বড়ি খাওয়াতে মুক্তচিন্তার কথা বলেন কিন্তু জাতীয় ঐক্য ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় কেন শাহবাগ থেকে, টিভি চ্যানেল থেকে, নাটক সিনেমা থেকে শুধুই ঘৃণা ছড়ান, উত্তেজনাকে উস্কে দেন, আপনার বিবেকে কি এই প্রশ্ন জাগেনি কোনদিন? আপনার মনে কি এই প্রশ্ন জাগেনি যে ঘৃণাকে পুঁজি করে ইতিহাসে কোন জাতি কবে কখন কিভাবে উন্নতি করেছিলো?


দেশের এই ক্রান্তি লগ্নে আমাদের কি একটি মধ্যপন্থি, মডারেট ও উদার মানসিকতা সম্পন্ন জনতার সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিৎ নয়? আমি শুধু প্রশ্নগুলো রেখে গেলাম, সিধ্যান্ত আপনাদের। আমার তাই মনে হচ্ছে শাহবাগ কোন সমাধানের দিকে নয় বরং সমস্যার দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে।


প্রচন্ড গালির বন্যায় উড়ে যাবো, লোকে "তুই রাজাকার" বলবে জেনেও আমি যা মনে করি তাই লিখে গেলাম।

লেখাটি লিখেছেনঃ Ahad M Nizam
collected from  https://www.facebook.com/newbasherkella

Wednesday, February 13, 2013

ইসলামের দৃষ্টিতে বিশ্ব ভালবাসা দিবস (Valentine day)

পর্ব ১  ইসলামিক ভালবাসাঃ
প্রবন্ধটি পড়া হলে, শেয়ার করতে ভুলবেন না


লেখক: আ.স.ম শোয়াইব আহমাদ (পিএইচ.ডি)
সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

ভালবাসার পরিচয় :
‘ভালবাসা’ এক পবিত্র জিনিস যা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এর পক্ষ হতে আমরা পেয়েছি। ভালবাসা’ শব্দটি ইতিবাচক। আল্লাহ তা‘আলা সকল ইতিবাচক কর্ম-সম্পাদনকারীকে ভালবাসেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَلَا تُلْقُوا بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ وَأَحْسِنُوا إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ

‘‘এবং স্বহস্তে নিজেদেরকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়ো না। তোমরা সৎকর্ম কর, নিশ্চয় আল্লাহ্‌ মুহসিনদের ভালবাসেন।’’(সূরা আল-বাকারা:১৯৫)
ভুলের পর ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং পবিত্রতা অবলম্বন করা এ দুটিই ইতিবাচক কর্ম। তাই আল্লাহ তাওবাকারী ও পবিত্রতা অবলম্বনকারীদেরকেও ভালবাসেন। আল্লাহ বলেন,

إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ التَّوَّابِينَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِينَ
‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ তাওবাকারী ও পবিত্রতা অবলম্বনকারীদেরকে ভালবাসেন।’’(সূরা আল-বাকারা:২২২)

তাকওয়া সকল কল্যাণের মূল। তাই আল্লাহ মুত্তাকীদেরকে খুবই ভালবাসেন। তিনি বলেন,
فَإِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُتَّقِين

‘‘আর নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাকীদেরকে ভালবাসেন।’’(সূরা আল ইমরান:৭৬)
পবিত্র এ ভালবাসার সাথে অপবিত্র ও নেতিবাচক কোন কিছুর সংমিশ্রণ হলে তা আর ভালবাসা থাকে না, পবিত্রও থাকে না; বরং তা হয়ে যায় ছলনা,শঠতা ও স্বার্থপরতা।
ভালবাসা, হৃদয়ে লুকিয়ে থাকা এক অদৃশ্য সুতোর টান। কোন দিন কাউকে না দেখেও যে ভালবাসা হয়; এবং ভালবাসার গভীর টানে রূহের গতির এক দিনের দূরত্ব পেরিয়েও যে দুই মুমিনের সাক্ষাত হতে পারে তা ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার এক বর্ণনা থেকে আমরা পাই। তিনি বলেন,

النعم تكفر والرحم تقطع ولم نر مثل تقارب القلوب
‘‘কত নি‘আমতের না-শুকরি করা হয়, কত আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা হয়, কিন্তু অন্তরসমূহের ঘনিষ্ঠতার মত (শক্তিশালী) কোন কিছু আমি কখনো দেখি নি।’’(ইমাম বুখারী, আল-আদাবুল মুফরাদ :হাদীস নং২৬২)

ভালবাসার মানদণ্ড :
কাউকে ভালবাসা এবং কারো সাথে শত্রুতা রাখার মানদণ্ড হলো একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি। শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই কাউকে ভালবাসতে হবে এবং শত্রুতাও যদি কারো সাথে রাখতে হয়, তাও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই। এটাই শ্রেষ্ঠ কর্মপন্থা। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,

إِنَّ أَحَبَّ الْأَعْمَالِ إِلَى اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ الْحُبُّ فِي اللَّهِ وَالْبُغْضُ فِي اللَّهِ
‘‘নিশ্চয় আল্লাহর নিকট শ্রেষ্ঠ আমল হলো আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই কাউকে ভালবাসা এবং শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই কারো সাথে শত্রুতা রাখা।’’
(আহমদ, মুসনাদুল আনসার, হাদিস নং২০৩৪১)
ঈমানের পরিচয় দিতে হলে, কাউকে ভালবাসবার আগে আল্লাহর জন্য হৃদয়ের গভীরে সুদৃঢ় ভালবাসা রাখতে হবে। কিছু মানুষ এর ব্যতিক্রম করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَمِنْ النَّاسِ مَنْ يَتَّخِذُ مِنْ دُونِ اللَّهِ أَندَادًا يُحِبُّونَهُمْ كَحُبِّ اللَّهِ وَالَّذِينَ آمَنُوا أَشَدُّ حُبًّا لِلَّهِ
‘‘আর মানুষের মধ্যে কেউ কেউ আল্লাহ্‌ ছাড়া অন্যকে আল্লাহ্‌র সমকক্ষরূপে গ্রহণ করে এবং আল্লাহকে ভালবাসার মত তাদেরকে ভালবাসে; কিন্তু যারা ঈমান এনেছে আল্লাহ্‌র প্রতি ভালবাসায় তারা সুদৃঢ়।’’(সূরা আল-বাকারা:১৬৫)
শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই কাউকে ভালবাসতে হবে, নতুবা কোন ব্যক্তি ঈমানের স্বাদ পাবে না। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,
ثَلَاثٌ مَنْ كُنَّ فِيهِ وَجَدَ حَلَاوَةَ الْإِيمَانِ أَنْ يَكُونَ اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِمَّا سِوَاهُمَا وَأَنْ يُحِبَّ الْمَرْءَ لَا يُحِبُّهُ إِلَّا لِلَّهِ وَأَنْ يَكْرَهَ أَنْ يَعُودَ فِي الْكُفْرِ كَمَا يَكْرَهُ أَنْ يُقْذَفَ فِي النَّارِ
‘‘তিনটি গুণ যার মধ্যে থাকে সে ঈমানের স্বাদ পায়। ১. আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তার কাছে অন্য সব কিছু থেকে প্রিয় হওয়া। ২. শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই কাউকে ভালবাসা। ৩. কুফুরীতে ফিরে যাওয়াকে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার মত অপছন্দ করা।’’
(বুখারী, কিতাবুল ঈমান, হাদিস নং:১৫)

আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ভালবাসার ফযীলত :
আল্লাহ রাব্বুল ইয্‌যতের মহত্ত্বের নিমিত্তে যারা পরস্পর ভালবাসার সম্পর্ক স্থাপন করে, কিয়ামতের দিন তাদেরকে তিনি তাঁর রহমতের ছায়ায় জায়গা দেবেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,

إِنَّ اللَّهَ يَقُولُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَيْنَ الْمُتَحَابُّونَ بِجَلَالِي الْيَوْمَ أُظِلُّهُمْ فِي ظِلِّي يَوْمَ لَا ظِلَّ إِلَّا ظِلِّي
‘‘কিয়ামতের দিন আল্লাহ বলবেন, আমার মহত্ত্বের নিমিত্তে পরস্পর ভালবাসার সম্পর্ক স্থাপনকারীরা কোথায় ? আজ আমি তাদেরকে আমার বিশেষ ছায়ায় ছায়া দান করব। আজ এমন দিন, যে দিন আমার ছায়া ব্যতীত অন্য কোন ছায়া নেই।’’
মুসলিম, কিতাবুল বিররি ওয়াস-সিলাহ, হাদিস নং৪৬৫৫)

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আরও বলেন,

إِنَّ مِنْ عِبَادِ اللَّهِ لَأُنَاسًا مَا هُمْ بِأَنْبِيَاءَ وَلَا شُهَدَاءَ يَغْبِطُهُمُ الْأَنْبِيَاءُ وَالشُّهَدَاءُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِمَكَانِهِمْ مِنَ اللَّهِ تَعَالَى قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ تُخْبِرُنَا مَنْ هُمْ قَالَ هُمْ قَوْمٌ تَحَابُّوا بِرُوحِ اللَّهِ عَلَى غَيْرِ أَرْحَامٍ بَيْنَهُمْ وَلَا أَمْوَالٍ يَتَعَاطَوْنَهَا فَوَ اللَّهِ إِنَّ وُجُوهَهُمْ لَنُورٌ وَإِنَّهُمْ عَلَى نُورٍ لَا يَخَافُونَ إِذَا خَافَ النَّاسُ وَلَا يَحْزَنُونَ إِذَا حَزِنَ النَّاسُ..
‘‘নিশ্চয় আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে এমন কিছু মানুষ আছে যারা নবীও নয় শহীদও নয়; কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ হতে তাঁদের সম্মানজনক অবস্থান দেখে নবী এবং শহীদগণও ঈর্ষান্বিত হবে। সাহাবিগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল ! আমাদেরকে বলুন, তারা কারা ? তিনি বলেন, তারা ঐ সকল লোক, যারা শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই একে অপরকে ভালবাসে। অথচ তাদের মধ্যে কোন রক্ত সম্পর্কও নেই, এবং কোন অর্থনৈতিক লেন-দেনও নেই। আল্লাহর শপথ! নিশ্চয় তাঁদের চেহারা হবে নূরানি এবং তারা নূরের মধ্যে থাকবে। যে দিন মানুষ ভীত-সন্ত্রস্ত থাকবে,সে দিন তাঁদের কোন ভয় থাকবে না। এবং যে দিন মানুষ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকবে, সে দিন তাঁদের কোন চিন্তা থাকবে না..।’’(সুনানু আবী দাঊদ, কিতাবুল বুয়ূ‘, হাদিস নং ৩০৬০)

পরস্পরের মধ্যে ভালবাসা বৃদ্ধি করার উপায় :
ইসলাম বলে, পরস্পরের মধ্যে ভালবাসা ও সৌহার্দ্য স্থাপিত না হলে পরিপূর্ণ ঈমানদার হওয়া যায় না, শান্তি ও নিরাপত্তা লাভ করা যায় না, এমনকি জান্নাতও লাভ করা যাবে না। তাই রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মুমিনদের পরস্পরের মধ্যে ভালবাসা ও সৌহার্দ্য বৃদ্ধির জন্য একটি চমৎকার পন্থা বাতলে দিয়েছেন। তিনি বলেন,

لَا تَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ حَتَّى تُؤْمِنُوا وَلَا تُؤْمِنُوا حَتَّى تَحَابُّوا أَوَلَا أَدُلُّكُمْ عَلَى شَيْءٍ إِذَا فَعَلْتُمُوهُ تَحَابَبْتُمْ أَفْشُوا السَّلَامَ بَيْنَكُمْ..*
‘‘তোমরা বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত ঈমানদার না হবে, তোমরা ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না পরস্পরের মধ্যে ভালবাসা ও সৌহার্দ্য স্থাপন করবে। আমি কি তোমাদেরকে এমন বিষয়ের কথা বলব না, যা করলে তোমাদের মধ্যে ভালবাসা ও সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠিত হবে ? সাহাবীগণ বললেন, নিশ্চয় ইয়া রাসূলাল্লাহ ! (তিনি বললেন) তোমাদের মধ্যে বহুল পরিমাণে সালামের প্রচলন কর।’’(মুসলিম, কিতাবুল ঈমান, হাদিস নং ৮১)

পর্ব 2
বিশ্ব ভালবাসা দিবস কি :
এক নোংরা ও জঘন্য ইতিহাসের স্মৃতিচারণের নাম বিশ্ব ভালবাসা দিবস। এ ইতিহাসটির বয়স সতের শত সাঁইত্রিশ বছর হলেও ‘বিশ্ব ভালবাসা দিবস’ নামে এর চর্চা শুরু হয় সাম্প্রতিক কালেই। দুই শত সত্তর সালের চৌদ্দই ফেব্রুয়ারির কথা। তখন রোমের সম্রাট ছিলেন ক্লডিয়াস। সে সময় ভ্যালেন্টাইন নামে একজন সাধু, তরুণ প্রেমিকদেরকে গোপন পরিণয়-মন্ত্রে দীক্ষা দিত। এ অপরাধে সম্রাট ক্লডিয়াস সাধু ভ্যালেন্টাইনের শিরশ্ছেদ করেন। তার এ ভ্যালেন্টাইন নাম থেকেই এ দিনটির নাম করণ করা হয় ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’ যা আজকের ‘বিশ্ব ভালবাসা দিবস’।
বাংলাদেশে এ দিবসটি পালন করা শুরু হয় ১৯৯৩ইং সালে। কিছু ব্যবসায়ীর মদদে এটি প্রথম চালু হয়। অপরিণামদর্শী মিডিয়া কর্মীরা এর ব্যাপক কভারেজ দেয়। আর যায় কোথায় ! লুফে নেয় বাংলার তরুণ-তরুণীরা। এরপর থেকে ঈমানের ঘরে ভালবাসার পরিবর্তে ভুলের বাসা বেঁধে দেয়ার কাজটা যথারীতি চলছে। আর এর ঠিক পিছনেই মানব জাতির আজন্ম শত্রু শয়তান এইডস নামক মরণ-পেয়ালা হাতে নিয়ে দাঁত বের করে হাসছে। মানুষ যখন বিশ্ব ভালবাসা দিবস সম্পর্কে জানত না, তখন পৃথিবীতে ভালবাসার অভাব ছিলনা। আজ পৃথিবীতে ভালবাসার বড় অভাব। তাই দিবস পালন করে ভালবাসার কথা স্মরণ করিয়ে দিতে হয়! আর হবেই না কেন! অপবিত্রতা নোংরামি আর শঠতার মাঝে তো আর ভালবাসা নামক ভালো বস্তু থাকতে পারে না। তাই আল্লাহ তা‘আলা মানুষের হৃদয় থেকে ভালবাসা উঠিয়ে নিয়েছেন।
বিশ্ব ভালবাসা দিবসকে চেনার জন্য আরও কিছু বাস্তব নমুনা পেশ করা দরকার। দিনটি যখন আসে তখন শিক্ষাঙ্গনের শিক্ষার্থীরা বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তো একেবারে বেসামাল হয়ে উঠে। নিজেদের রূপা-সৌন্দর্য উজাড় করে প্রদর্শনের জন্য রাস্তায় নেমে আসে। শুধুই কি তাই ! অঙ্কন পটীয়সীরা উল্কি আঁকার জন্য পসরা সাজিয়ে বসে থাকে রাস্তার ধারে। তাদের সামনে তরুণীরা পিঠ, বাহু আর হস্তদ্বয় মেলে ধরে পছন্দের উল্কিটি এঁকে দেয়ার জন্য। তারপর রাত পর্যন্ত নীরবে-নিবৃতে প্রেমিক বা প্রেমিকার সাথে খোশ গল্প। এ হলো বিশ্ব ভালবাসা দিবসের কর্মসূচি! বিশ্ব ভালবাসা দিবস না বলে বিশ্ব বেহায়াপনা দিবস বললে অন্তত নামকরণটি যথার্থ হতো।

বিশ্ব ভালবাসা দিবস পালনের ক্ষতিকর কিছু দিক :
১. ভালবাসা নামের এ শব্দটির সাথে এক চরিত্রহীন লম্পটের স্মৃতি জড়িয়ে যারা ভালবাসার জয়গান গেয়ে চলেছেন, পৃথিবীবাসীকে তারা সোনার পেয়ালায় করে নীল বিষ পান করিয়ে বেড়াচ্ছেন।

২. তরুণ-তরুণীদের সস্তা যৌন আবেগকে সুড়সুড়ি দিয়ে সমাজে বিশৃঙ্খলা ও ফাসাদ সৃষ্টি করা হচ্ছে। অথচ আল্লাহ তা‘আলা ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের ভালবাসেন না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَيَسْعَوْنَ فِي الْأَرْضِ فَسَادًا وَاللَّهُ لَا يُحِبُّ الْمُفْسِدِينَ

‘‘আর তারা তো পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টি করে বেড়ায়। আর আল্লাহ ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের ভালবাসেন না।’’(সূরা আল মায়িদাহ : ৬৪)
৩. নৈতিক অবক্ষয় দাবানলের মত ছড়িয়ে যাচ্ছে।
৪. নির্লজ্জতা ও বেহায়াপনা জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি লাভ করছে। যারা ঈমানদারদের সমাজে এ ধরণের অশ্লীলতার বিস্তার ঘটায়, দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের জন্য আল্লাহ তা‘আলা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির ব্যবস্থা করে রেখেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
إِنَّ الَّذِينَ يُحِبُّونَ أَنْ تَشِيعَ الْفَاحِشَةُ فِي الَّذِينَ آمَنُوا لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ

‘‘ যারা মু’মিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে তাদের জন্য আছে দুনিয়া ও আখিরাতে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি..।’’(সূরা আন-নূর :১৯)
বস্তুত যে সমাজেই চরিত্র-হীনতার কাজ ব্যাপক, তথায় আল্লাহর নিকট থেকে কঠিন আযাব সমূহ ক্রমাগত অবতীর্ণ হওয়া অবধারিত,  আব্দুল্লাহ ইবন ‘উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন :
… لَمْ تَظْهَرِ الْفَاحِشَةُ فِي قَوْمٍ قَطُّ حَتَّى يُعْلِنُوا بِهَا إِلَّا فَشَا فِيهِمُ الطَّاعُونُ وَالْأَوْجَاعُ الَّتِي لَمْ تَكُنْ مَضَتْ فِي أَسْلَافِهِمِ…
‘‘যে জনগোষ্ঠীর মধ্যে নির্লজ্জতা প্রকাশমান, পরে তারা তারই ব্যাপক প্রচারেরও ব্যবস্থা করে, যার অনিবার্য পরিণতি স্বরূপ মহামারি, সংক্রামক রোগ এবং ক্ষুধা-দুর্ভিক্ষ এত প্রকট হয়ে দেখা দিবে, যা তাদের পূর্ববর্তীদের মধ্যে কখনই দেখা যায় নি।’’(ইবনু মাজাহ, কিতাবুল ফিতান, হাদিস নং-৪০০৯)
৫. তরুণ-তরুণীরা বিবাহ পূর্ব দৈহিক সম্পর্ক গড়তে কোন রকম কুণ্ঠাবোধ করছে না। অথচ তরুণ ইউসুফ আলাইহিস সালামকে যখন মিশরের এক রানী অভিসারে ডেকেছিল, তখন তিনি কারাবরণকেই এহেন অপকর্মের চেয়ে উত্তম জ্ঞান করেছিলেন। রোমান্টিক অথচ যুব-চরিত্রকে পবিত্র রাখার জন্য কী অতুলনীয় দৃষ্টান্ত! আল্লাহ জাল্লা শানুহু সূরা ইউসুফের ২৩-৩৪ নম্বর আয়াত পর্যন্ত এ ঘটনা বর্ণনা করেছেন এ ভাবে-
‘‘সে যে স্ত্রীলোকের ঘরে ছিল সে তার কাছ থেকে অসৎকাজ কামনা করল ও দরজাগুলো বন্ধ করে দিল এবং বলল, ‘আস।’ সে বলল, ‘আমি আল্লাহ্‌র আশ্রয় প্রার্থনা করছি, তিনি আমার প্রভু; তিনি আমার থাকার সুন্দর ব্যবস্থা করেছেন। নিশ্চয়ই সীমালঙ্ঘনকারীরা সফলকাম হয় না। সে রমণী তো তার প্রতি আসক্ত হয়েছিল এবং সেও তার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ত যদি না সে তার প্রতিপালকের নিদর্শন দেখতে পেত। আমি তাকে মন্দ-কাজ ও অশ্লীলতা হতে বিরত রাখার জন্য এভাবে নিদর্শন দেখিয়েছিলাম। সে তো ছিল আমার বিশুদ্ধচিত্ত বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত। ওরা উভয়ে দৌড়ে দরজার দিকে গেল এবং স্ত্রীলোকটি পিছন হতে তার জামা ছিঁড়ে ফেলল, তারা স্ত্রীলোকটির স্বামীকে দরজার কাছে পেল। স্ত্রীলোকটি বলল, ‘যে তোমার পরিবারের সাথে কুকর্ম কামনা করে তার জন্য কারাগারে প্রেরণ বা অন্য কোন মর্মন্তুদ শাস্তি ছাড়া আর কি দণ্ড হতে পারে? ইউসুফ বলল, ‘সে-ই আমার কাছ থেকে অসৎকাজ কামনা করছিল।’ স্ত্রীলোকটির পরিবারের একজন সাক্ষী সাক্ষ্য দিল, ‘যদি তার জামার সামনের দিক থেকে ছিঁড়ে থাকে তবে স্ত্রীলোকটি সত্য কথা বলেছে এবং পুরুষটি মিথ্যাবাদী, কিন্তু তার জামা যদি পিছন দিক থেকে ছিঁড়ে থাকে তবে স্ত্রীলোকটি মিথ্যা বলেছে এবং পুরুষটি সত্যবাদী। গৃহস্বামী যখন দেখল যে, তার জামা পিছন দিক থেকে ছেঁড়া হয়েছে তখন সে বলল, ‘নিশ্চয়ই এটা তোমাদের নারীদের ছলনা, তোমাদের ছলনা তো ভীষণ। হে ইউসুফ! তুমি এটা এড়িয়ে যাও এবং হে নারী! তুমি তোমার অপরাধের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর; তুমিই তো অপরাধী। নগরের কিছু সংখ্যক নারী বলল, ‘আযীযের স্ত্রী তার যুবক দাস হতে অসৎকাজ কামনা করছে, প্রেম তাকে উন্মত্ত করেছে, আমরা তো তাকে স্পষ্ট ভুলের মধ্যে দেখছি। স্ত্রীলোকটি যখন ওদের কানা-ঘুষার কথা শুনল, তখন সে ওদেরকে ডেকে পাঠাল, ওদের জন্য আসন প্রস্তুত করল, ওদের সবাইকে একটি করে ছুরি দিল এবং ইউসুফকে বলল, ‘ওদের সামনে বের হও।’ তারপর ওরা যখন তাঁকে দেখল তখন ওরা তাঁর সৌন্দর্যে অভিভূত হল এবং নিজেদের হাত কেটে ফেলল। ওরা বলল, ‘অদ্ভুত আল্লাহর মাহাত্ম্য! এ তো মানুষ নয়, এ তো এক মহিমান্বিত ফেরেশতা। সে বলল, ‘এ-ই সে যার সম্বন্ধে তোমরা আমার নিন্দা করেছ। আমি তো তার থেকে অসৎকাজ কামনা করেছি। কিন্তু সে নিজেকে পবিত্র রেখেছে; আমি তাকে যা আদেশ করেছি সে যদি তা না করে, তবে সে কারারুদ্ধ হবেই এবং হীনদের অন্তর্ভুক্ত হবে। ইউসুফ বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক! এ নারীরা আমাকে যার দিকে ডাকছে তার চেয়ে কারাগার আমার কাছে বেশী প্রিয়। আপনি যদি ওদের ছলনা হতে আমাকে রক্ষা না করেন তবে আমি ওদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ব এবং অজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হব। তারপর তার প্রতিপালক তার ডাকে সাড়া দিলেন এবং তাকে ওদের ছলনা হতে রক্ষা করলেন। তিনি তো সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।(অনুবাদ, সূরা ইউসুফ : ২৩-৩৪)

৬. শরীরে উল্কি আঁকাতে যেয়ে নিজের ইয্‌যত-আব্রু পরপুরুষকে দেখানো হয়। যা প্রকাশ্য কবিরা গুনাহ। যে ব্যক্তি উল্কি আঁকে এবং যার গায়ে তা আঁকা হয়, উভয়য়ের উপরই আল্লাহর লা‘নত বর্ষিত হয়। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,
لَعَنَ اللَّهُ الْوَاصِلَةَ وَالْمُسْتَوْصِلَةَ وَالْوَاشِمَةَ وَالْمُسْتَوْشِمَةَ *
‘‘যে ব্যক্তি পর-চুলা লাগায় এবং যাকে লাগায়; এবং যে ব্যক্তি উল্কি আঁকে এবং যার গায়ে আঁকে, আল্লাহ তাদেরকে অভিসম্পাত করেন।’’(বুখারী,কিতাবুল লিবাস,হাদিস নং৫৪৭৭)
মূলত যার লজ্জা নেই, তার পক্ষে এহেন কাজ নেই যা করা সম্ভব নয়। তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
إِذَا لَمْ تَسْتَحِ فَاصْنَعْ مَا شِئْت
‘‘যদি তোমার লজ্জা না থাকে তাহলে যা ইচ্ছা তাই করতে পার।’’(বুখারী, কিতাবু আহাদীসিল আম্বিয়া, হাদিস নং৩২২৫)

৭. ভালবাসা দিবসের নামে নির্লজ্জতা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে যিনা-ব্যভিচার, ধর্ষণ ও খুন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।  আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
… وَلَا فَشَا الزِّنَا فِي قَوْمٍ قَطُّ إِلَّا كَثُرَ فِيهِمُ الْمَوْتُ…
‘‘যে জনগোষ্ঠীর-মধ্যেই ব্যভিচার ব্যাপক হবে, তথায় মৃত্যুর আধিক্য ব্যাপক হয়ে দেখা দেবে।’’(মুয়াত্তা মালিক, কিতাবুল জিহাদ, হাদিস নং-৮৭০)
উপরোক্ত আয়াত ও হাদিসগুলোর ভাষ্য কতটা বাস্তব বর্তমান বিশ্বের বাস্তব চিত্র এর প্রমাণ বহন করে। অবাধ যৌন মিলনের ফলে “AIDS” নামক একটি রোগ বর্তমানে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এটা এমনি মারাত্মক যে, এ রোগে আক্রান্ত হলে এর কোন আরোগ্য নেই। 

কিছু পরিসংখ্যান দিলে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে :
1.     বিশ্বের ১৪০ কোটিরও বেশী লোক থেকে ১৯৮৮ সালের আগস্ট পর্যন্ত এক লক্ষ এগার হাজারেরও বেশী “AIDS”  রোগীর তালিকা পাওয়া গিয়েছে।’’(আব্দুল খালেক, নারী,(ই,ফা,বা.ঢাকা,১৯৮৪ইং) পৃ. ৯৬)
2.     ১৯৯২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ২,৪২,০০০ এইডস রোগীর সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। এর মধ্যে ১,৬০,০০০ মৃত্যু বরণ করেছিল। ১৯৯২ সালের গবেষণালব্ধ তথ্য মতে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত ৫০ লক্ষ্য এইডস রোগী মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে।(Baron& Byrne, Ibid., P. 329)
3.     ৩০ শে ডিসেম্বর ১৯৯৬ এর Time International’ পত্রিকায় পরিবেশিত তথ্য মতে, ৬৫ লক্ষ জীবন ছিনিয়ে নিয়েছে এই ঘাতক ব্যাধি। আগামী ৫ বৎসরে আরও ৩ কোটি লোক মারা যাবে এই রোগে।(মাসিক পৃথিবী, (ঢাকা, ডিসেম্বর, ১৯৯৯), পৃ. ৫)
4.     বিশ্ব এইডস দিবস ২০০০-এর প্রাক্কালে জাতিসংঘ যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে তাতে বলা হয়েছে : ‘‘ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদক সেবনকারী এবং সমকামিতা, ইতর রীতির যৌনতার মাধ্যমে পূর্ব ইউরোপ, রাশিয়া, ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, ল্যাটিন-আমেরিকা ক্যারিবীয় অঞ্চল ও এশিয়ায় এইডস দেখা দিয়েছে। আফ্রিকার কয়েকটি দেশে প্রতি তিনজনের একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ এইডস আক্রান্ত। শিশুদের ৮০ ভাগ এই রোগের ভাইরাসে আক্রান্ত। আফ্রিকার উপ-সাহারা এলাকায় এ বছর ১০ লাখেরও বেশী লোক এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। রাশিয়া ও পূর্ব ইউরোপে নতুন করে এইডস দেখা দিয়েছে। মাত্র একবছরে এইডস রোগীর সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। উত্তর আফ্রিকা এবং মধ্য প্রাচ্যেও নতুন করে এইডস সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে।’’(রয়টার্স, দৈনিক ইনকিলাব, (ঢাকা, ২রা ডিসেম্বর ২০০০ ইং) পৃ .১-২)
5.     ৬. জাতিসংঘের দেয়া তথ্য মতে : ‘‘বিশ্বে ৩ কোটি ৬০ লাখ লোক এইডসে আক্রান্ত ২০০০ইং সনে ৫০ লাখ লোক নতুন করে এইডসে আক্রান্ত হয়েছে।’’(প্রাগুক্ত)
6.     ৭. ‘‘বিশ্ব এইডস দিবসের আলোচনা সভায় (ঢাকা) বাংলাদেশের তৎকালীন সমাজকল্যাণ, প্রতি মন্ত্রী ড. মোজাম্মেল হোসেনের দেয়া তথ্য মতে, বাংলাদেশে এইডস ভাইরাস বহনকারী রোগীর সংখ্যা একুশ হাজারের বেশী।’’(দৈনিক ইনকিলাব, (স্টাফ রিপোর্টার, বিশ্ব এইডস দিবসে ঢাকায় আলোচনা সভা, ২রা ডিসেম্বর, ২০০০ ইং) পৃ.১)
সিফিলিস-প্রমেহ : বিশেষজ্ঞদের ধারণা, আমেরিকার শতকরা ৯০% অধিবাসী রতিজ দুষ্ট ব্যাধিতে আক্রান্ত। সেখানকার সরকারী হাসপাতালগুলিতে প্রতি বৎসর গড়ে দুই লক্ষ সিফিলিস এবং এক লক্ষ ষাট হাজার প্রমেহ রোগীর চিকিৎসা করা হয়। (Encyclopedia Britannica, V. 23, P. 45.) এছাড়াও আমেরিকায় প্রতি বৎসর ত্রিশ-চল্লিশ হাজার শিশু জন্মগত সিফিলিস রোগে মৃত্যুবরণ করে। ( আঃ খালেক, নারী, (ঢাকা : ই.ফা. বা., ১৯৮৪ ইং), পৃ. ৯৬)
Dr. Laredde বলেন— ফ্রান্সে প্রতি বৎসর কেবল সিফিলিস ও তদ-জনিত রোগে ত্রিশ হাজার লোক মারা যায়। (প্রাগুক্ত)
হার্পিস রোগ :
ব্যভিচারের কারণে জননেন্দ্রিয়ে সৃষ্ট অত্যন্ত পীড়াদায়ক রোগ হলো Genital Herpes. মার্কিন জনসংখ্যার শতকরা দশ ভাগ (জনসংখ্যা ২৬ কোটি ধরলে তার ১০% হয় ২ কোটি ৬০ লক্ষ) এই রোগে আক্রান্ত। এটাই সব নয়। প্রত্যেক বৎসর প্রায় ৫০০,০০০ মানুষের নাম এই মারাত্মক হার্পিস রোগীদের তালিকায় নতুন করে যুক্ত হচ্ছে। (Baron & Byrne, Social psychology : Understanding Human Interaction, P. 329.)
৮. বিশ্ব ভালবাসা দিবসের এসব ঈমান বিধ্বংসী কর্ম-কাণ্ডের ফলে মুসলিম যুব-মানস ক্রমশ ঈমানি বল ও চেতনা হারিয়ে ফেলছে।
৯. মানুষের হৃদয় থেকে তাকওয়া তথা আল্লাহর ভয় উঠে যাচ্ছে।
প্রিয় মুমিন-মুসলিম ভাই-বোনেরা ! ভালবাসা কোন পর্বীয় বিষয় নয়। এটি মানব জীবনের সুখ-শান্তির জন্য একটি জরুরি সার্বক্ষণিক মানবিক উপাদান। সুতরাং আমাদের মধ্যে ভালবাসা ও সৌহার্দ বৃদ্ধির জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শিখানো সার্বক্ষণিক পন্থাটি অবলম্বন করি।
বিশ্ব ভালবাসা দিবসের নামে এসব ঈমান বিধ্বংসী কর্মকাণ্ড হতে আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে হেফাযত করুন। শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই যেন কাউকে ভালবাসি এবং শত্রুতাও যদি কারো সাথে রাখতে হয়, তাও যেন আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই রাখি। আমীন !!!



পর্ব  ৩ – ইসলামে এর বিধান

প্রশ্নঃ  আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। সাম্প্রতিক সময়ে ‘ভালবাসা দিবস’ উদযাপন অনেকের (বিশেষ করে ছাত্রীদের) মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে; যা খ্রিষ্টানদের একটি উৎসব। তখন প্রত্যেকের বস্ত্র হয় সম্পূর্ন লাল রঙের— পোশাক-জুতা সবই; আর তারা পরস্পরের নিকট লাল ফুল বিনিময় করে।শ্রদ্ধেয় শাইখের নিকট এ-জাতীয় উৎসব উদযাপন করার বিধান বর্ণনা করার জন্য অনুরোধ রইল। তা-ছাড়া এ-রূপ বিষয়ে মুসলিমদের প্রতি আপনাদের দিকনির্দেশনা কী? আল্লাহ আপনাদের হেফাযত ও রক্ষা করুন॥

* উত্তর 
কয়েকটি কারণে ‘ভালবাসা দিবস’ উদযাপন জায়েয নয়:—
প্রথমত : এটি একটি নব-উদ্ভাবিত বিদ‘আতী দিবস, শরীয়তে যার কোনো ভিত্তি নেই।
দ্বিতীয়ত: এটি অনৈতিক-প্রেম পরিণতির দিকে মানুষকে ধাবিত করে।
তৃতীয়ত: এর কারণে সালাফে সালেহীনের পথ-পদ্ধতির বিরোধী এরূপ অর্থহীন বাজে কাজে মানুষের মন-মগজ ব্যস্ত করার প্রবণতা তৈরি হয়।
তাই এ-দিনে দিবস উদযাপনের কোনো কিছু প্রকাশ করা কখনও বৈধ নয়; চাই তা খাদ্য-পানীয় গ্রহণ, পোশাক-আশাক পরিধান, পরস্পর উপহার বিনিময় কিংবা অন্য কিছুর মাধ্যমেই হোক না কেন।
আর প্রত্যেক মুসলিমের উচিত নিজ দীন নিয়ে গর্বিত হওয়া এবং অনুকরণপ্রিয় না হওয়া: কেউ করতে দেখলেই সেও করবে, কেউ আহ্বান করলেই তাতে সাড়া দিবে, এমনটি যেন না হয়।
আল্লাহ্‌র নিকট দু‘আ করি, তিনি যেন প্রত্যেক মুসলিমকে প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য যাবতীয় ফিতনা থেকে হেফাযত করেন; আর আমাদেরকে তিনি তাঁর অভিভাবকত্ব ও তাওফিক প্রদান করে ধন্য করেন।

collected from  QuranerAlo.com