Saturday, April 6, 2013

লংমার্চ ৬ এপ্রিল



ইসলাম ও নবী করীমের (সা.) অবমাননার বিচার এবং সংবিধানে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনর্বহালসহ ১৩ দফা দাবিতে  ঢাকার রাস্তায় লংমার্চ কর্মসূচি ডাকে হেফাজতে ইসলাম।এই লংমার্চ এ দেশের  ১৮ দল সহ সবকয়টি ইসলামি দল  আলেম-ওলামা ও মুসল্লি সমর্থন দিয়েছে ।


হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবি :

১. সংবিধানে ‘আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনঃস্থাপন এবং কুরআন-সুন্নাহবিরোধী সব আইন বাতিল করতে হবে।

২.আল্লাহ, রাসূল সা: ও ইসলাম ধর্মের অবমাননা এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে কুৎসা রোধে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে জাতীয় সংসদে আইন পাস করতে হবে।

৩. কথিত শাহবাগী আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী স্বঘোষিত নাস্তিক-মুরতাদ এবং প্রিয় নবী সা:-এর শানে জঘন্য কুৎসা রটনাকারী কুলাঙ্গার ব্লগার ও ইসলামবিদ্বেষীদের সব অপপ্রচার বন্ধসহ কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

৪. ব্যক্তি ও বাকস্বাধীনতার নামে সব বেহায়াপনা, অনাচার, ব্যভিচার, প্রকাশ্য নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ, মোমবাতি প্রজ্বলনসহ সব বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে হবে।

৫. ইসলামবিরোধী নারীনীতি, ধর্মহীন শিক্ষানীতি বাতিল করে শিক্ষার প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে।
৬. সরকারিভাবে কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণা এবং তাদের প্রচারণা ও ষড়যন্ত্রমূলক সব অপতৎপরতা বন্ধ করতে হবে।

৭. মসজিদের নগরী ঢাকাকে মূর্তির নগরীতে রূপান্তর এবং দেশব্যাপী রাস্তার মোড় ও কলেজ-ভার্সিটিতে ভাস্কর্যের নামে মূর্তি স্থাপন বন্ধ করতে হবে।

৮. জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে মুসল্লিদের নির্বিঘে নামাজ আদায়ে বাধা-বিপত্তি ও প্রতিবন্ধকতা অপসারণ এবং ওয়াজ-নসিহত ও ধর্মীয় কার্যকলাপে বাধাদান বন্ধ করতে হবে।

৯. রেডিও, টেলিভিশনসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় দাড়ি-টুপি ও ইসলামি কৃষ্টি-কালচার নিয়ে হাসি-ঠাট্টা এবং নাটক-সিনেমায় খল ও নেতিবাচক চরিত্রে ধর্মীয় লেবাস-পোশাক পরিয়ে অভিনয়ের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের মনে ইসলামের প্রতি বিদ্বেষমূলক মনোভাব সৃষ্টির অপপ্রয়াস বন্ধ করতে হবে।

১০. পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশব্যাপী ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত এনজিও এবং খ্রিষ্টান মিশনারিদের ধর্মান্তকরণসহ সব অপতৎপরতা বন্ধ করতে হবে।

১১. রাসূলপ্রেমিক প্রতিবাদী আলেম-ওলামা, মাদরাসাছাত্র এবং তৌহিদি জনতার ওপর হামলা, দমন-পীড়ন, নির্বিচার গুলিবর্ষণ এবং গণহত্যা বন্ধ করতে হবে।

১২. সারা দেশের কওমি মাদরাসার ছাত্র-শিক, ওলামা-মাশায়েখ এবং মসজিদের ইমাম-খতিবকে হুমকি-ধমকি ও ভয়ভীতি দানসহ তাদের বিরুদ্ধে সব ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে।

১৩. অবিলম্বে গ্রেফতারকৃত সব আলেম-ওলামা, মাদরাসাছাত্র ও তৌহিদি জনতাকে মুক্তিদান, দায়েরকৃত সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং আহত ও নিহতদের তিপূরণসহ দুষ্কৃতকারীদের বিচারের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দিতে হবে


লংমার্চ- পথে পথে বাধা

লংমার্চ প্রতিরোধে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে টানা ২৪ ঘণ্টার হরতালের ডাক দিয়েছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম, সম্মিলিতি পেশাজীবী পরিষদসহ ২৭টি সংগঠন।এ ছাড়া গণজাগরণ মঞ্চ ২২ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।

যানবাহন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে একদিন আগে থেকেই।ঢাকা থেকে বিচ্ছিন্ন সারা দেশ। এরই মধ্যে নিজস্ব ব্যবস্থায় বাস, মাইক্রোবাস, ট্রাকে করে বিভিন্ন এলাকা থেকে ঢাকায় রওনা হয়েছেন হেফাজতে ইসলামের লাখো কর্মী। আসছেন ট্রেনে করেও। তবে তাদের অভিযোগপথে পথে বাধার। বাধা দেয়া হচ্ছে সরকারি দলেরনেতাকর্মীদের পক্ষ থেকে। হেফাজত কর্মীদের বহনকারী গাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। এছাড়া লংমার্চ বহর অনেক স্থানে আটকে দেয় পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনী। বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও গতকাল পর্যন্তরাজধানীতে এসে পৌঁছেছেনহেফাজতের বিপুল সংখ্যক কর্মী। বাধা উপেক্ষা করেই আজ দিনের প্রথমভাগে রাজধানীর পার্শ্ববর্তী জেলা থেকেআরও হাজার হাজার কর্মীরসমাবেশে অংশ নেয়ার কথা আছে। সকাল ১০টা থেকে রাজধানীর শাপলা চত্বরে শুরু হবে লংমার্চের সমাবেশ। এই সমাবেশকে ঘিরে রাজধানীতে নেয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তা। কয়েক হাজার পুলিশ ও র‌্যাব সদস্য মোতায়েন থাকবে পুরো এলাকায়। রাতে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এদিকে গতকালরাতেই সমাবেশ মঞ্চ তৈরির কাজ সম্পন্ন হয়। রাত ১০টার দিকে কয়েক হাজার কর্মী মঞ্চে নিজস্ব নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেন। তারা নিজেরাই চারপাশের রাস্তা বন্ধ করে দেন। বিকালে সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, লংমার্চে আসতে তাদের কর্মীদের পথে পথে বাধা দেয়া হয়। তারা জানিয়েছেন, আজকের সমাবেশ থেকে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

হেফাজতের নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেছেন, টুপিওয়ালা কাউকে দেখলেইরেলস্টেশনে টিকিট দেয়া হচ্ছে না। যারা বাস বা অন্য যানবাহন নিয়ে রওনাহন তারা অহেতুক তল্লাশির শিকার হন। দক্ষিণাঞ্চল থেকে আসা হেফাজতের কর্মীরা গাড়িবহর নিয়ে সকালে রওনা হলেও তারা ফেরিঘাটে এসে দেখতে পানফেরি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া ঢাকার পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে যানবাহন না পেয়ে হেঁটেই হেফাজতের কর্মীরা ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হন। যানবাহন না পাওয়ায় অনেকজেলা থেকে নেতাকর্মীরা লংমার্চে আসার কর্মসূচিবাতিল করে নিজ নিজ জেলায় অবস্থানের ঘোষণা দেন। চট্টগ্রাম থেকে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীঢাকায় আসার প্রস্তুতি নিলেও শেষ পর্যন্ত তারাঢাকায় আসতে পারেননি। এ কারণে দুপুর থেকে নগরীরর জমিয়তুল ফালাহ মসজিদের সামনে এবং ওয়াসা মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার থেকে গাড়িবহর নিয়ে ঢাকাউদ্দেশ্যে আসতে না পারায় প্রত্যেক জেলায় আজ সড়ক অবরোধ করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। সিলেট থেকে হেঁটেই হেফাজতের কর্মীরা ঢাকারউদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন।যশোর থেকে ঢাকার আসার পথে ফরিদপুরে হেফাজতের গাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে।
স্টাফ রিপোর্টার, হবিগঞ্জ থেকে জানান, লংমার্চে অংশ নিতে পারছেন না হবিগঞ্জের লক্ষাধিক মুসল্লি ও আলেম-ওলামা। প্রতিবাদে আজ শনিবার সকাল ৮টায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের শায়েস্তাগঞ্জ মেজর জেনারেল এমএ রব গোল চত্বর এলাকায় অবরোধ কর্মসূচি পালন করবেন ওলামা-মাশায়েখগণ ­।

লংমার্চে একাত্মতা প্রকাশ করেছে হবিগঞ্জ ইসলামী সংগ্রাম পরিষদ। তারা হবিগঞ্জের বানিয়াচং, বাহুবল, নবীগঞ্জ, সদরসহ কয়েকটি উপজেলার লক্ষাধিক মুসল্লি ও ওলামা-মাশায়েখ প্রস্তুতি নেন লংমার্চে অংশ নেয়ার। সেহিসেবে হবিগঞ্জ মোটর মালিক সমিতি ও বাস মালিকদের সঙ্গে পরিবহনের জন্য যোগাযোগ করে তারা ব্যর্থ হন। প্রশাসনের নির্দেশে মালিক সমিতি বাস প্রদানে অনীহা প্রকাশ করে। তবে হবিগঞ্জ মোটর মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সফিকুল ইসলাম চৌধুরী জানান, গাড়ি ভাঙচুরের ভয়ে কোন বাস মালিক গাড়ি দিচ্ছেন না।তবে সরকারের পক্ষ থেকে গাড়ি প্রদানে কোন বাধা নেই বলে তিনি জানান। এদিকে পরিবহন না পেয়ে হবিগঞ্জ ইসলামী সংগ্রামপরিষদের সভাপতি মাওলানাতোফাজ্জল হকের সভাপতিত্বে গতকাল সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বক্তব্য রাখেন- সংগ্রামপরিষদ নেতা মহিব উদ্দিনআহমেদ সোহেল, হাফেজ আবদুর রহমান, মাওলানা আইয়ুব বিন সিদ্দিক। সভায় তারা লংমাচের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে আজ সকাল ৭টায় পায়ে হেঁটে ১৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মহাসড়কে পৌঁছুবেন। সেখানে পরিবহন পাওয়া গেলে ঢাকায় যাত্রা করবেন। অন্যথায় মহাসড়কে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন বলে জানিয়েছেন সংগ্রাম পরিষদের মুখপাত্র মহিব উদ্দিন আহমেদ সোহেল।

নাটোর প্রতিনিধি জানান, লংমার্চের কারণে সরাসরিঢাকায় চলাচলরত বাস বন্ধকরে নিয়েছে বাস মালিকরা।
গতকাল শহরের পুলিশ লাইনস, বনপাড়া বাইপাস ও কাছিকাটা টোলপ্লাজাসহ বিভিন্ন স্থানে পুলিশি টহল বসিয়ে মুসল্লিদের বাধা প্রদান করা হয়। এছাড়া শহরের বিভিন্ন মোড়ে সরকারদলীয় কর্মীরাটহল দিয়ে মুসল্লিদের বাসে উঠতে বাধা দিয়েছে।শহরের ভবানীগঞ্জ মোড়ে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে সেখানেই বিক্ষোভ মিছিল করেন তৌহিদী জনতা। সে সময় সরকার বিরোধী স্ল্লোগান না দিতে মুসল্লিদের শাসিয়ে দেয় সরকারদলীয় কর্মীরা। এ ব্যাপারে নাটোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আপেল মাহমুদ এটাকে নিয়মিত টহল দাবি করেছেন। তবে বাধাপ্রাপ্ত মুসল্লিরা জানান, ঢাকা যেতে নিষেধ করে বাস ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। এ সময় বাধা উপেক্ষা করে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের থানায় নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেয়।
দিরাই (সুনামগঞ্জ) থেকে জানান, দিরাইয়ে হেফাজতে ইসলামের লংমার্চে বাধা দিয়েছে পুলিশ। পুলিশি বাধার মুখে লংমার্চে নাযেতে পেরে থানা পয়েন্টেঅবস্থান কর্মসূচি পালন করেন লংমার্চগামী নেতাকর্মীরা। গতকাল জুমার নামাজের পর হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্র্র্মীরা ­ থানা পয়েন্টে ভাড়া করা ৫টি বাসে ওঠার চেষ্টা করে। এ সময় দিরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এনামুল হকের নেতৃত্বে একদল পুলিশ বাসটি ঘিরে ফেলেন। ভয়ে বাসচালক, বাস রেখেই পালিয়ে যান। এরপর নেতাকর্মীরা জায়নামাজ বিছিয়ে রাস্তায় বসে পড়েন। সেখানে ঘণ্টাব্যাপী চলা অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন, মাওলানা নাজিম উদ্দিন, মাওলানা নূরউদ্দিন আহমদ, মাওলানা ইলিয়াছ আহমদ, হাফেজ মাওলানা আরিফ আহমদ, মাওলানা লোকমান আহমদ, মাওলানা মুখতার হোসাইন প্রমুখ। দিরাই থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এনামুল হক বলেন, আমরা কাউকে বাধা প্রদান করিনি। আমরা শুধু বলেছি আপনারা যারাযাচ্ছেন তাদের ভিডিও করে রাখবো। বাস আটকিয়েছে মালিক সমিতি।


পুলিশ বেষ্টনীর মধ্যে শাপলা চত্তরে মহাসমাবেশকে সামনে রেখে রাজধানীর মতিঝিলে এগিয়ে চলেছে হেফাজতে ইসলামের মঞ্চ তৈরির কাজ। প্রায় ২০০ লোকের ধারণক্ষমতা সম্পন্ন ২৫ বাই
৩০ ফিট মঞ্চটি তৈরির কাজ শুরু হয় শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায়। রাত ১২টার মধ্যে এর নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। শুক্রবার সন্ধ্যার পর থেকেই মতিঝিল শাপলা চত্বর এলাকার দু’পাশের রাস্তা বন্ধ রয়েছে।হেফাজতের হাজার হাজার কর্মী সেখানে অবস্থান করছেন.  ইতিমধ্যেই  সারা দেশ থেকে ঢাকায় পৌঁছেছেন ৫ লাখ লংমার্চ সমর্থক আলেম-ওলামা ও মুসল্লি।

No comments:

Post a Comment