জামাত-শিবির
সম্পর্কে এক ধরণের অস্বস্তিকর ভীতির সঞ্চার করা হয়েছে সাধারণ মানুষের মনে।
ভীতি সঞ্চার করা হয়েছে নিখুঁত পরিকল্পনার মাধ্যমে, অতি যত্নের সাথে, দীর্ঘ
দিনের অক্লান্ত সাধণার মাধ্যমে। এরই ফলশ্রুতিতে যারা জামাত-শিবিরের কোন
কর্মীকে সরাসরি দেখার সুযোগ পায়নি তারা যখন এদের নাম শুনতে পায়, তাদের
দূর্বল মনের পর্দায় ভেসে ওঠে দন্ত-নখর ছড়িয়ে হামলে পড়া ভয়ংকর রাক্ষসের
বিভৎস চেহারা। “রগ কাটা” গালি শুনতে শুনতে অভ্যস্ত সাধারণ মানুষে ভাবতেই
পারে, জামাত-শিবিরের কর্মীরা ক্ষুর নিয়ে নরসুন্দরের মতো পথে প্রান্তরে,
হাটে-বাজারে ঘুরে বেড়ায় কঁচি কঁচি ছাত্রদের তরতাজা রগের সন্ধানে, যেন প্রথম
সুযোগেই কসাইয়ের নিঁপুন হাতে হাত পায়ের রগ কেটে ম্যাগি নুডুলস বানিয়ে
খাবে। কেউ কেউ আরো একধাপ এগিয়ে মগবাজার, পল্টন, কাটাবন কিংবা জামায়াত
নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোয় পথ চলতে চলতে শুনতে পান ভূগর্ভস্থ সারি সারি ট্যাংক,
সাজোয়াযানের কুচকাওয়াজ।
কিন্তু
জামায়াত-শিবিরের যেকোন নেতা-কর্মীর সাথে সেই ভীতসন্ত্রস্ত নাগরিক প্রথম
দর্শনেই কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যান। কল্পণার আর্টগ্যালারিতে সজ্জিত ভয়ালদর্শন
রাক্ষসের সাথে নীরিহ অতি সাধারণ মানুষটিকে মেলাতে একেবারেই অপরাগ হন। আরো
আশ্চর্য, প্রতি নিয়ত রাস্তাঘাটে, হাটে বাজারে, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে
জামায়াত শিবিরের এই কল্পিত দানবেরাই প্রতিপক্ষের হাতে নির্যাতিত হয়,
হাত-পায়ের রগ খুইয়ে বিছানায় কাতরায়, প্রকাশ্যে লগি-বৈঠার আঘাতে আঘাতে
কুকুরের মতো নিহত হয়। সুদীর্ঘ সময় ধরে অঙ্কিত এই কল্পিত রাক্ষস-খোক্ষসেরা
নিয়মিত মিছিলে নির্যাতিত হয়, মিটিংয়ে নিপীড়নের শিকার হয়, মানববন্ধনে
রক্তাক্ত হয়, প্রতি মুহুর্তে এদের মৃত্যুর দুয়ার থেকে পালিয়ে বেড়াতে হয়।
একাত্তরে
জামায়াতের ভূমিকা নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে ব্যাপক অপপ্রচারের পরেও সাধারণ
মানুষেরা এইসব অতি সাধারণ নেতা-কর্মীদের মুখোমুখি হয়ে তাদের প্রতি
সহানুভূতিশীল হয়ে পড়ছে, দিনে দিনে জামাত-শিবিরের দাওয়াত ছড়িয়ে পড়ছে দেশের
প্রতিটি কোনে কোনে। দিনে দিনে জামাত সাধারণ মানুষের মাঝে এতটাই শক্তিশালী
শেকড় গেড়েছে যে বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন অনিবার্য বাস্তবতা নাম জামায়াতে
ইসলামী। জামায়াত যে কোন আন্দোলনে সমর্থন দিলে সে আন্দোলন সাফল্য পায়,
জামায়াত সমর্থন উঠিয়ে নিলে সে আন্দোলন মাঠে মারা যায়।
জামায়াত
এ অগ্রযাত্রার প্রতি পদক্ষেপে সীমাহীন বাঁধার মুখোমুখি হয়েছে। ভারতীয়
উপমহাদেশে জামায়াতে ইসলামী প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে এমন কোন সরকারের আমল
নেই যখন জামায়াত নির্যাতিত হয় নি। তারপরও জামায়াতের শেকড় ছড়িয়ে পড়েছে
সাধারণ মানুষের হৃদয়ে। যে জমিন সিক্ত হয়েছে জামাত-শিবিরের রক্তে, সে জমিন
প্রতিদান দিতে কুন্ঠিত হয়নি, সে জমিন পরিণত হয়েছে দূর্ভেদ্য ঘাটিতে।
প্রচারেই
প্রসার। জামায়াতের ক্ষেত্রে দেখি তার পুরো উল্টো চিত্র। জামায়াতের
বিরুদ্ধে অপপ্রচারেই যেন জামায়াতের সম্প্রসারণ ঘটে চলেছে। জামায়াতকে
সন্ত্রাসী প্রমাণে চেষ্টা হয়েছে, তারা সন্ত্রাসের শিকার বলে প্রমাণিত
হয়েছে; জামায়াতকে জঙ্গী প্রমাণে চেষ্টা হয়েছে, জামায়াত জঙ্গীবাদের শিকার
বলে প্রমাণিত হয়েছে; জেএমবি জঙ্গীদের বিরুদ্ধে আইনী লড়াইয়ে কেবলমাত্র
জামায়াতে ইসলামীর প্রথম সারির নেতাকে জীবন দিতে হয়েছে, জঙ্গীদের গুলিতে
প্রাণ দিতে হয়েছে জামায়াতের সাবেক জেলা আমীর এ্যাডভোকেট হায়দার হোসাইনকে।
ফলে যেখানেই জামায়াত বিরোধী অপপ্রচার সেখানেই সাধারণ মানুষ প্রকৃত সত্যের
মুখোমুখি হয়ে জামায়াতের সমর্থকে পরিণত হয়ে পড়ে।
এখনো
থেমে নেই জামায়াত বিরোধী অপপ্রচার। জামায়াতকে সন্ত্রাসী-জঙ্গী প্রমাণে উঠে
পড়ে লেগেছে ওরা। একের পর এক জামায়াতের নেতাদেরকে গ্রেফতার করে ফাঁদ পাতা
হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে প্রথম সারির নেতা থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায়ের
নেতাদেরও, গ্রেফতার করা হয়েছে কয়েক হাজার সাধারণ কর্মী-সমর্থককে। উদ্দেশ্য
স্পষ্ট, জামায়াতকে একটি গৃহযুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করা। সুদীর্ঘ সময় নিয়ে
জামায়াতের যে ভয়াল চরিত্র তৈরী করেছে ইসলামী আন্দোলনের শত্রুরা,
প্রতিমুহুর্তে খুঁচি খুঁচিয়ে জামায়াতের ভেতর থেকে বের করার চেষ্টা চলছে
কল্পিত সেই দৈত্যদের।
সবকিছু ব্যর্থ
হলেও ওরা ভেবেছিল ইসলামী আন্দোলনের প্রাণপুরুষ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক
জিএস ও ভাষা সৈনিক, জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযমের
গ্রেফতারের সময় হয়তো ফাঁদে পা দেবে জামায়াত-শিবির। মতিউর রহমান নিজামীর
গ্রেফতারেও ওরা ভেবেছিল জামাত-শিবির হামলে পড়বে প্রচন্ড আক্রোশে, কোনঠাসা
বেড়াল যেমন আত্মরক্ষায় ভয়ংকর শব্দে ফেটে পড়ে। মুজাহিদ, সাঈদী,
কামারুজ্জামান, কাদের মোল্লাদের গ্রেফতারেও ঠিক তেমনি জামাত-শিবিরের ভেতর
থেকে কল্পিত দৈত্যদের খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে বের করতে অসমর্থ হয়েছে ওরা। এরই
ধারাবাহিকতায় আজ (১২ জানুয়ারী ২০১২) তারিখেও গোলাম আযমের গ্রেফতারের
প্রতিবাদে আয়োজিত মিছিলে পুলিশ পরিকল্পিত হামলা চালিয়ে জামাত-শিবিরকে
সন্ত্রাসী প্রমাণের নাটক করেছে।
এতকিছুর
পরও জামায়াতে ইসলামী তাদের সত্যিকারের চারিত্রিক মাধুর্য সাধারণ মানুষের
সামনে ফুটিয়ে তুলতে সমর্থ হয়েছে। জামায়াত-শিবির প্রমাণ করেছে তারা
নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনে বিশ্বাস করে। গোলাম আযমের মতো বয়োবৃদ্ধ নেতাকে
যেভাবে হেনস্তা করা হলো তারপরেও ব্যক্তিগত স্বার্থকে কুরবানী দিয়ে ইসলামী
আন্দোলনের কল্যাণে, দেশের বৃহত্তর স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে জামায়াত শিবির
সন্ত্রাসের পথকে সযত্নে এড়িয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে তাদের প্রত্যাশিত
বিজয়ের পথে আরেক ধাপ এগিয়ে গেল বলেই সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করে।
No comments:
Post a Comment